বাণী

এত জল ও কাজল চোখে, পাষানী আনলে বল কে।
টলমল জল-মোতির মালা দুলিছে ঝালর-পলকে ।।
দিল কি পূব হাওয়াতে দোল, বুকে কি বিঁধিল কেয়া?
কাঁদিয়া কুটিলে গগন এলায়ে ঝামর-অলকে।।
চলিতে পৈঁচি কি হাতের বাঁধিল বৈচি-কাঁটাতে?
ছাড়াতে কাঁচুলির কাঁটা বিঁধিল হিয়ার ফলকে।।
[যে দিনে মোর দেওয়া-মালা ছিঁড়িলে আনমনে সখি,
জড়াল জুই-কুসুমি-হার বেণীতে সেদিন ওলো কে।।
যে-পথে নীর ভরণে যাও বসে রই সে পথ-পাশে
দেখি, নিত কার পানে চাহি কলসীর সলিল ছলকে।।]
মুকুলী-মন সেধে সেধে কেবলি ফিরিনু কেঁদে,
সরসীর ঢেউ পালায় ছুটি' না ছুঁতেই নলিন-নোলকে ।।
বুকে তোর সাত সাগরের জল, পিপাসা মিটল না কবি
ফটিক জল ! জল খুঁজিস যেথায় কেবলি তড়িৎ ঝলকে।। 

বাণী

ওরে দেখে যা তোরা নদীয়ায়
গোরার রূপে এলো ব্রজের শ্যামরায়॥
	মুখে হরি হরি বলে
	হেলে দুলে নেচে চলে
নরনারী প্রেমে গলে ঢলে পড়ে রাঙা পায়॥
ব্রজে নূপুর পরি নাচিত এমনি হরি
কূল ভুলিয়া সবে ছুটিত এমন করি
শচীমাতার রূপে কাঁদিছে মা যশোদা
বিষ্ণু প্রিয়ার চোখে কাঁদে কিশোরী রাধা
নহে নিমাই নিতাই ও যে কানাই বলাই
শ্রীদাম সুদাম এলো জগাই মাধাই-এ হায়॥
আজ এসেছে ভূবন ভুলাতে অসি নাই বাঁশি নাই
ও ভাই এবারে শূন্য হাতে এসেছে ভুবন ভুলাতে।
ও ভাই লীলা পাগল এলো প্রেমে মাতাতে
ডুবু ডুবু নদীয়া বিশ্ব ভাসিয়া যায়॥

বাণী

কোরাস্:
ডুবু ডুবু ধর্ম-তরী, ফাট্‌ল মাইন সর্‌দা’র
সামাল সামাল পড়ল সাড়া ব-মাল মেয়ে মর্দার।।
এ কোন্ এলো বালাই, এবে পালাই বল কোন্ দেশ,
গাছের নীচে ঘ’ড়েল শেয়াল, কাকের মুখে সন্দেশ।
কন্যা-ডোবা কন্যা এলো, ভাস্ল বুঝি ঘর-দ্বার।।
আয়েস্ ক’রে ধুম্‌ড়ো মেয়ের বাড়বে বয়েস চৌদ্দ
বাপের বুকের তপ্ত-খোলায়? দিব্যি গেয়ান-বোধ তো!
হদ্দ হ’লেন বৌদি ভেবে, ছাড়ল্ নাড়ী বড়দা’র।।
দিব্যি স্বর্গ-মার্গে যেত গৌরী-দানের মারফৎ
যমের যমজ জামাতৃকে লিখে দিয়ে ফার্খত!
(হ’ল) নৈকষ্য কস্য এখন, জাত গেল ‘মেল-খড়দা’র।।
দেব্‌তা বুড়ো শিব যে মাগেন আট-বছরী নাতনি,
চতর্দশী মুক্তকেশী — ক’নে নয়, সে হাত্‌নী!
পুঁটুলি নয় — এঁটুলি সে, কিংবা পুলিশ-সর্দার।।
সিঙ্গি-চড়া ধিঙ্গি মেয়ে বৌ হবে কি? বাপ্ রে!
প্রথম প্রণয়-সম্ভাষণেই হয়ত দিবে থাপ্‌ড়ে।
লাফ দিয়ে সে বাইরে যাবে ঝাঁপ খুলে ঐ পর্দার।।
সম্বন্ধ ভুলে শেষে যা-তা বলে ডাকব?
বধূ তো নয়, যদুর পিসি! কোথায় তারে রাখব?
ধর্মিণী নয়, জার্মানী শেল! গো-স্বামী, খবরদার।।
টাকাতে নয়, ভাব্‌নাতে শেষ মাথাতে টাক পড়বে,
যোদ্ধা বামা গুটিয়ে জামা কথায় কথায় লড়বে,
যেই পাবে না সেমিজ, বডিস, কৌটো পানের জর্দার।।
স্বামীকে সে বলবে নাথ, রাখ্‌বে না মান দুর্গার,
হয়ত কবে বল্‌বে, ‘পিও, ঝোল রেঁধেছি মুর্গার!’
আন্‌বে কে বাপ গুর্খা-সেপাই দন্ত-নখর-বর্দার।।
গটমটিয়ে কইবে কথা, কট্‌মটিয়ে চাইবে,
‘বামা’ সে নয়, ‘ডাইনে সে যে, ডাইনে’ সদা ধাইবে!
নিতুই নতুই চাইবে যেতে সিমলা শিলং হর্‌দ্বার।।
ভেবেছিলাম জাত নিয়েছিস, জাতিটা নয় যাক্‌গে,
গৃহিণীরূপ গ্রহণী রোগ, তাও ছিল শেষ ভাগ্যে!
দোক্ত ফেলে গিন্নি কাঁদেন, কর্তা করেন ঘর-বার।।

বাণী

বহে বনে সমীরণ ফুল জাগানো
এসো গোপন সাথি মোর ঘুম ভাঙানো
এসো আঁধার রাতেরি চাঁদ পাতি মায়ারি ফাঁদ
এসো এসো মম স্বপন সাধ॥
হৃদয় তিমিরে এসো হৃদ-সায়র দোল লাগানো
	সাথি মোর ঘুম ভাঙানো॥
বনে মোর ফুলগুলি আছে তব পথ চেয়ে
পরান পাপিয়া পিউ পিউ ওঠে গেয়ে
তরুণ অরুণ এসো আলোকেরি পথ বেয়ে
এসো আমার তনু মন প্রাণ হৃদয় রাঙানো
	এসো ভুবন ভোলানো
কোথা গোপন সাথি মোর ঘুম ভাঙানো॥

বাণী

যাও মেঘদূত, দিও প্রিয়ার হাতে
আমার বিরহ–লিপি লেখা কেয়া পাতে।।
আমার প্রিয়ার দিরঘ নিশাসে
থির হয়ে আছে মেঘ যে–দেশেরই আকাশে
আমার প্রিয়ার ম্লান মুখ হেরি’
ওঠে না চাঁদ আর যে–দেশে রাতে।।
পাইবে যে–দেশে কুন্তল–সুরভি বকুল ফুলে
আমার প্রিয়া কাঁদে এলায়ে কেশ সেই মেঘনা–কূলে।
স্বর্ণলতার সম যার ক্ষীণ করে
বারে বারে কঙ্কণ চুড়ি খুলে পড়ে
মুকুল’ বয়সে যথা বরষার ফুল–দল
বেদনায় মুরছিয়া আছে আঙিনাতে।।

বাণী

দ্বৈত	:	আবার শ্রাবণ এলো ফিরে তেমনি ময়ুর ডাকে,
		দোলনা কেন বাঁধলে না গো এবার কদম-শাখে।।
স্ত্রী	:	সঙ্গে ল'য়ে গোপ-গোপীরে
পুরুষ	:	ব্রজের কিশোর যাবে ফিরে
দ্বৈত	:	লীলা-কিশোর শ্যাম যে লীলা-সাথীর সাথে থাকে।।
দ্বৈত	:	দোলনা বেঁধে রইবো চেয়ে আমরা মেঘের পানে
		আয় ওরে আয়, নির্জন বনকে জাগাই সেই কাজরি গানে গানে।
স্ত্রী	:	বৃষ্টি ধারায় টাপুর টুপুর
পুরুষ	:	শুনব তাহার পায়ের নূপুর
দ্বৈত	:	বিজলিতে তার চপল চাওয়া দেখব মেঘের ফাঁকে।।