বাণী

সখি বল কোন দেশে যাই।
সে বৃন্দা আছে সে বন আছে তবু সে বৃন্দাবন নাই —
গোবিন্দ বিনে লো বৃন্দে (বৃন্দে গো) রাধার বৃন্দাবন হয়েছে আঁধার।
বনে সীতার ছিল যে রাম, মোর বনে নাই ঘনশ্যাম।
আমি কি লয়ে থাকি, কেন দেহ রাখি।
পিঞ্জর আছে প'ড়ে, নাই শ্যাম পাখি,
আর ময়ূর ডাকে না 'কে গো' বলিয়া।
পাপিয়া ডাকে না পিয়া।
কৃষ্ণপ্রিয়া গো 'প্রিয়া প্রিয়া' বলে পাপিয়া ডাকে না পিয়া।
পথে পথে আর রহে না গো ব্রজগোপিনী আড়ি পাতিয়া।
আজি রাধার সাথে সবার আড়ি,
কৃষ্ণপ্রিয়ার কৃষ্ণ গেছে ছাড়ি'
তাই রাধার সাথে সবার আড়ি, সখি গো —
শুকায়ে গিয়াছে দ্বাদশ কুঞ্জ,
পূর্ণ চাঁদেরই ব্রজে একাদশীর তিথি,
হয়ত আবার বাজিবে বেণু তার, রবে না ব্রজে যবে রাধার স্মৃতি।।

বাণী

সকাল হ'ল শোন রে আজান
	ওঠ রে শয্যা ছাড়ি'
তুই মসজিদে চল দ্বীনের কাজে
	ভোল দুনিয়াদারি।।
ওজু করে ফেল রে ধুয়ে
	নিশীথ রাতের গ্লানি
সিজদা করে জায়নামাজে
	ফেল রে চোখের পানি;
খোদার নামে সারাদিনের
	কাজ হবে না ভারী।।
নামাজ প'ড়ে দু'হাত তুলে
	প্রার্থনা কর তুই -
ফুল-ফসলে ভ'রে উঠুক
	সকল চাষির ভূঁই
সকল লোকের মুখে হোক
	আল্লার নাম জারী।।
ছেলে-মেয়ে সংসার-ভার
	সঁপে দে আল্লারে
নবীজীর দোয়া ভিক্ষা কর
	কর রে বারে বারে;
তোর হেসে নিশি প্রভাত হবে
	সুখে দিবি পাড়ি।।

বাণী

(প্রিয়া) স্বপনে এসো নিরজনে।
(প্রিয়া) আধো রাতে চাঁদের সনে।।
	রহিব যখন মগন ঘুমে
	যেয়ো নীরবে নয়ন চুমে’,
মধুকর আসে যেমন গোপনে মল্লিকা চামেলি বনে।।
	বাতায়নে চাঁপার ডালে
	এসো কুসুম হয়ে নিশীথ কালে,
ভীরু কপোতী সম এসো হৃদয়ে মম বাহুর মালা হয়ে বাসর শয়নে।।

বাণী

	সন্ধ্যা হলো ঘরকে চলো, ও ভাই মাঠের চাষি
	ভাটিয়ালি সুরে বাজে রাখাল ছেলের বাঁশি।।
	পিদিম নিয়ে একলা জাগে একলা ঘরের বধূ
	হৃদয়-পাতে লুকিয়ে রেখে সারা দিনের মধু;
	পথ চেয়ে সে বসে আছে কাজ হয়েছে বাসি রে তার
		কাজ হয়েছে বাসি।
(যে)	মন সারাদিন ছিল পড়ে হালের গরুর পানে,
	দিনের শেষে ঘরের জরু সেই মনকে টানে
	সেথা মেটে ঘরের দাওয়ায় লুটায় রে
	মেটে ঘরের দাওয়ায় লুটায় কালো চোখের হাসি রে ভাই
		কালো চোখের হাসি।
	পুবান হাওয়া ঢেউ দিয়ে যায় আউশ ধানের ক্ষেতে,
	এই ফসলের দেখব স্বপন শুয়ে শুয়ে রেতে;
		ও ভাই শুয়ে শুয়ে রেতে
	সকাল বেলা আবার যেন মাঠে ফিরে আসি রে
		এই মাঠে ফিরে আসি।।

বাণী

সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ-বেদনা-অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
এ বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।
জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষী, শস্য-লক্ষ্মী নারী,
সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারী’।
পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ,
কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।
দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বঁধু,
পুরুষ এসেছে মরুতৃষা লয়ে, নারী যোগায়েছে মধু।
শষ্যক্ষেত্র উর্বর হল, পুরুষ চালাল হাল,
নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল।
নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে’
ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।
নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে’
জন্ম লভিছে মহা-মানবের মহা-শিশু তিলে তিলে।
জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান
মাতা ভগ্নি ও বধুদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।
কোন্‌ রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে,
কত নারী দিল সিঁথির সিদুর, লেখা নাই তার পাশে।
কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি, কত বোন দিল সেবা,
বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী।

কবিতাঃ নারী (প্রথম খন্ড)

বাণী

সেদিন অভাব ঘুচবে কি মোর যেদিন তুমি আমার হবে
আমার ধ্যানে আমার জ্ঞানে প্রাণ মন মোর ঘিরে রবে।।
	রইবে তুমি প্রিয়তম
	আমার দেহে আত্মা-সম
জানি না সাধ মিটবে কি-না -  তেমন করেও পাব যবে।।
পাওয়ার আমার শেষ হবে না পেয়েও তোমায় বক্ষতলে
সাগর মাঝে মিশে গিয়েও নদী যেমন ব’য়ে চলে।
	চাঁদকে দেখে পরান জুড়ায়
	তবু দেখার সাধ কি ফুরায়
মিটেছেল সাধ কি রাধার নিত্য পেয়েও নীল-মাধবে।।