বাণী

এ কোন মায়ায় ফেলিলে আমায়
	চির জনমের স্বামী-
তোমার কারণে এ তিন ভুবনে
	শান্তি না পাই আমি।।
	অন্তরে যদি লুকাইতে চাই
এ আগুন আমি কেমনে লুকাই, ওগো অন্তর্যামী।।
মুখ থাকিতেও বলিতে পারে না বোবা স্বপনের কথা;
বলিতেও নারি লুকাতেও নারি; তেমনি আমার ব্যথা।
	যে দেখেছে প্রিয় বারেক তোমায়
	বর্ণিতে রূপ- ভাষা নাহি পায়
পাগলিনী-প্রায় কাঁদিয়া বেড়ায় অসহায়, দিবাযামী।।

বাণী

আসল যখন ফুলের ফাগুন, গুল্-বাগে ফুল চায় বিদায়।
এমন দিনে বন্ধু কেন বন্ধুজনে ছেড়ে যায়॥
মালঞ্চে আজ ভোর না হতে বিরহী বুলবুল কাঁদে,
না ফুটিতে দলগুলি তার ঝর্‌ল গোলাব হিম-হাওয়ায়॥
পুরানো গুল-বাগ এ ধরা, মানুষ তাহে তাজা ফুল,
ছিঁড়ে নিঠুর ফুল-মালী আয়ুর শাখা হতে তায়॥
এই ধূলিতে হল ধূলি সোনার অঙ্গ বে-শুমার,
বাদশা অনেক নূতন বধূ ঝরল জীবন-ভোরবেলায়॥
এ দুনিয়ার রাঙা কুসুম সাঁজ না হতেই যায় ঝ’রে,
হাজার আফ্‌সোস, নূতন দেহের দেউল ছেড়ে প্রাণ পালায়॥
সামলে চরণ ফেলো পথিক, পায়ের নিচে মরা ফুল
আছে মিশে এই সে ধরার গোরস্থানে এই ধূলায়॥
হল সময় — লোভের ক্ষুধা মোহন মায়া ছাড় হাফিজ,
বিদায় নে তো ঘরের কাছে দূরের বঁধূ ডাকছে আয়॥

বাণী

প’রো প’রো চৈতালি-সাঁজে কুস্‌মি শাড়ি।
আজি তোমার রূপের সাথে চাঁদের আড়ি॥
প’রো ললাটে কাঁচপোকার টিপ,
তুমি আলতা প’রো পায়ে হৃদি নিঙাড়ি’॥
প্রজাপতির ডানা-ঝরা সোনার টোপাতে,
ভাঙা ভুরু জোড়া দিও বাতুল শোভাতে।
বেল-যূথিকার গ’ড়ে মালা প’রো খোঁপাতে
দিও উত্তরীয় শিউলি-বোঁটার রঙে ছোপাতে,
রাঙা সাঁঝের সতিনী তুমি রূপ-কুমারী॥

বাণী

এখনো মেটেনি আশা এখনো মেটেনি সাধ।
এখনো নয়ন মানে নাই তার চাহনির অপরাধ।।
	আজো ঢেউগুলি নীল সায়রের কোলে
	জল-তরঙ্গে ঝঙ্কার তোলে
পিয়াসি চাতক আজো চেয়ে ফেরে বরষার পরসাদ।।
কবে ফুটছিল রূপের কুসুম বনানীর লতা-গাছে,
আজো গৌরী-চাঁপার রঙটুকু তার মরমে লাগিয়া আছে।
	চ'লে গেছে চাঁদ আলো আবছায়
	দাগ ফেলে হিয়া-আয়নার গায়
থেমেছে কানুর বাঁশরি থামেনি যমুনার কলনাদ।।
ঢাল পিয়ালে লাল সিরাজী নিত্য দোদুল তালে তালে
আঁকবো বুকে প্রীতির ব্যথা রঙ্গিন নেশায় রঙ্গিন জালে।।
মত্ত হবো চিত্ত হারা বেদনা ভরা বদমেজাজি
করলে পাগল ব্যর্থ আশায় করলে প্রেমরে দাগাবাজি।।
রঙ্গিন বঁধু তুমি শুধু, তুমি শুধু সত্যি হবে
রঙ্গিন নেশায় রঙ্গিন পথে তুমি শুধু সাথী হবে।।
শুল্ক তালু কণ্ঠ আমার দে রে আমার রুগ্ন গালে
দে রে সাকি দে রে ঢেলে নিত্য দোদুল তালে তালে।।

বাণী

নারদ	:	হৃদি-পদ্মে চরণ রাখো বাঁকা ঘনশ্যাম।
ধ্রুব	:	বাঁকা শিখী-পাখা নয়ন বাঁকা বঙ্কিম ঠাম॥
নারদ	:	তুমি দাঁড়ায়ো ত্রিভঙ্গে!
ধ্রুব	:	অধরে মুরলী ধরি দাঁড়ায়ো ত্রিভঙ্গে॥
নারদ	:	সোনার গোধূলি যেন নিবিড় সুনীল নভে
		পীতধড়া প’রো কালো অঙ্গে (হরি হে)
ধ্রুব	:	নীল কপোত সম চরণ দুটি
		নেচে যাক অপরূপ ভঙ্গে (হরি হে)
উভয়	:	যেন নূপুর বাজে
		হরি সেই পায়ে যেন নূপুর বাজে।
		বনে নয় শ্যাম মনোমাঝে যেন নূপুর বাজে।
		ঐ চরণে জড়ায়ে পরান আমার
		(যেন) মঞ্জির হয়ে বাজে॥

চলচ্চিত্রঃ ‘ধ্রুব’ (ধ্রুব ও নারদের গান)

বাণী

তোরা বলিস্ লো সখি, মাধবে মথুরায়
কেমনে রাধার কাঁদিয়া বরষ যায়॥
খর-বৈশাখে কি দাহন থাকে বিরহিণী একা জানে
ঘৃত-চন্দন পদ্ম পাতায় দারুণ দহন-জ্বালা না জুড়ায়
‘ফটিক জলে’র সাথে আমি কাঁদি চাহিয়া গগন-পানে।
জ্বালা না জুড়ায় গো —
হরি-চন্দন বিনা ঘৃত-চন্দনে জ্বালা না জুড়ায় গো
শ্যাম-শ্রীমুখ-পদ্ম বিনা পদ্ম পাতায় জ্বালা না জুড়ায়॥
বরষায় অবিরল ঝর ঝর ঝরে জল জুড়াইল জগতের নারী
রাধার গলার মালা হইল বিজলি-জ্বালা তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি!
সখি রে, তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি।
প্রবাসে না যায় পতি সব নারী ভাগ্যবতী বন্ধু রে বাহুডোরে বাঁধে
ললাটে কাঁকন হানি’ একা রাধা অভাগিনী প্রদীপ নিভায়ে ঘরে কাঁদে।
জ্বালা তা’র জুড়ালো না জলে গো
শাওনের জলে তা’র মনের আগুন দ্বিগুণ জ্বলে গো
কৃষ্ণ-মেঘ গেছে চ’লে, অকরুণ অশনি হানিয়া হিয়ায় (সখি)॥
আশ্বিনে পরবাসী প্রিয় এলো ঘরে গো মিটিল বধূর মন-সাধ (সখি রে)
রাধার চোখের জলে মলিন হইয়া যায় কোজাগরী চাঁদ (মলিন হইয়া যায় গো)।
আগুন জ্বালালে শীত যায় নাকি রাধার কি হ’ল হায়
বুক ভরা তার জ্বলিছে আগুন তবু শীত নাহি যায়।
যায় না, যায় না আগুন জ্বলে —
বুকের আগুন জলে, তবু শীত যায় না, যায় না,
শীত যদি বা যায় নিশীথ না, যায় গো
যায় না, যায় না, রাধার যে কি হ’ল হায়॥
কলিয়া কৃষ্ণ-ছূড়া, ছড়ায়ে ফাগের গুঁড়া আসিল বসন্ত
রাধা-অনুরাগে রেঙে কে ফাগ খেলিবে গো, নাই ব্রজ-কিশোর দুরন্ত।
মাধবী-কুঞ্জে কুহু কুহরিছে মুহুমুহু ফুল-দোলনায় সবে দোলে,
এ মধু মাধবী রাতে রাধার মাধব নাই
দুলিবে রাধা কার কোলে সখি রে —  রাধা দোলে কার কোলে গো
শ্যাম-বল্লভ বিনা রাধা দোলে কার কোলে গো, বল্ সখি, দোলে কার কোলে।
ফুল-দোলে দোলে সবে পিয়াল-শাখে
রাধার প্রিয়া নাই, বাহু দু’টি দিয়া বাঁধিবে কাহাকে,
ঝরা-ফুল-সাথে রাধা ধূলাতে লুটায়॥