বাণী

এখনো ওঠেনি চাঁদ এখনো ফোটেনি তারা
এখনো দিনের কাজ হয়নি যে মোর সারা —
		হে পথিক যাও ফিরে।।
এখনো বাঁধিনি বেণী, তুলিনি এখনো ফুল
জ্বালি নাই মণিদীপ মম মন–মন্দিরে —
		হে পথিক যাও ফিরে।।
পল্লব–গুণ্ঠনে নিশি–গন্ধার কলি
চাহিতে পারে না লাজে দিবস যায়নি বলি’।
এখনো ওঠেনি ঢেউ থির সারসির নীরে —
		হে পথিক যাও ফিরে।।
যবে ঝিমাইবে চাঁদ ঘুমে তখন তোমার লাগি’
র’ব একা পথ চেয়ে বাতায়ন–পাশে জাগি’
কবরীর মালা খুলে ফেলে দেব ধীরে ধীরে —
		হে পথিক যাও ফিরে।।

বাণী

এসো বঁধূ ফিরে এসো, ভোলো ভোলো অভিমান।
দিব ও-চরণে ডারি’ মোর তনু মন প্রাণ।।
	জানি আমি অপরাধী
	তাই দিবানিশি কাঁদি’,
নিমেষের অপরাধের কবে হবে অবসান।।
	ফিরে গেলে দ্বারে আসি’
	বাসি কিনা ভালোবাসি,
কাঁদে আজ তব দাসী — তুমি তার হৃদে ধ্যান।।
	সে-দিন বালিকা-বধূ
	শরমে মরম-মধু
পি’য়াতে পারিনি বঁধূ — আজ এসে কর পান।।
	ফিরিয়া আসিয়া হেথা
	দিও দুখ দিও ব্যথা,
সহে না এ নীরবতা — হে দেবতা পাষান।।

বাণী

এসো প্রাণে গিরিধারী বন-চারী
	গোপীজন-মনোহরী।
	চঞ্চল গোকুল-বিহারী।।
লহ নব প্রীতির কদম-মালা
আনন্দ-চন্দন, প্রেম-ফুল-ডালা
নয়নে আরতি-প্রদীপ জ্বালা
	অঞ্জলি লহ আঁখি-বারি।।
প্রণয়-বিহ্বলা প্রাণ-রাধিকা
পরেছে তব নাম কলঙ্ক-টিকা।
অথির অনুরাগ গোপ-বালিকা
	চাহে পথ তোমারি।।

বাণী

এলো ফুলের মরশুম শরাব ঢালো সাকি
বকুল শাখে কোকিল ওঠে ডাকি’।।
গেয়ে ওঠে বুলবুল আঙ্গুর-বাগে
নীল আঁখি লাল হলো রাঙ্-অনুরাগে
আজি ফুল-বাসরে শিরাজির জল্‌সা
		বরবাদ্‌ হবে না-কি।।
চাঁপার গেলাস ভরি’ ভোমরা মধু পিয়ে
মহুয়া ফুলের বাসে আঁখি আসে ঝিমিয়ে।
পাপিয়া পিয়া পিয়া ডাকে বন-মাঝে
গোলাপ-কপোল রাঙে গোলাপী লাজে
হৃদয়-ব্যথার সুধা আছে তব কাছে
		রেখো না তারে ঢাকি’।।

বাণী

একি সুরে (কোন্ সুরে) তুমি গান শুনালে ভিনদেশি পাখি
এ যে সুর নহে, মদির সুরা, রে সুরের সাকি।।
		বসি’ মোর জানালা পাশে
		কেন বুক-ভাঙা নিরাশে
যাও ঘুম ভাঙায়ে নিতি সকরুণ সুরে ডাকি।।
তোর ও সুরে কাঁদছে ঊষা অস্ত চাঁদের গলা ধ’রে
ভোর-গগনের কপোল বেয়ে শিশির-অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
		আমি রইতে নারি ঘরে
		কেন প্রাণ কেমন করে
আমার মন লাগে না কাজে, আর জলে ভরে আঁখি।।

বাণী

এ ঘোর শ্রাবণ-নিশি কাটে কেমনে।
রহি’ রহি’ সেই মুখ পড়িছে মনে।।
	বিজলিতে সেই আঁখি
	চমকিছে থাকি’ থাকি’
শিহরিত এমনি সে বাহু-বাঁধনে।।
শন শন বহে বায় সে কোথায় সে কোথায়
নাহি নাহি ধ্বনি শুনি উতল পবনে হায়
চরাচর দুলিছে অসীম রোদনে।।