বাণী

কত যুগ যেন দেখিনি তোমারে দেখি নাই কতদিন।
তুমি যে জীবন, তোমারে না হেরি’, হয়েছিনু প্রাণহীন।।
তুমি যেন বায়ু, বায়ু যবে নাহি বয়
আমি ঢুলে পড়ি আয়ু মোর নাহি রয়,
তুমি যেন জল, বাঁচিতে পারিনা জল বিনা আমি মীন।।
তুমি জানো নাগো তব আশ্রয় বিনা আমি কত অসহায়,
তুমি না ধরিলে আমার এ তনু বাতাসে মিশায়ে যায়।
তাই মোর দেহ পাগলের প্রায়
তোমার অঙ্গ জড়াইতে চায়,
তাই উপবাসী তনু মোর হের দিনে দিনে হয় ক্ষীণ।।

বাণী

	কি দিয়ে পূজি ভগবান!
আমার ব’লে কিছু নাহি হরি সকলি তোমারি যে দান
	মন্দিরে তুমি, মূরতিতে তুমি
	পূজার ফুলে তুমি, স্তব-গীতে তুমি,
ভগবান দিয়ে ভগবান পূজা করিতে — তুমি যদি ভাব অপমান॥
	কেমন তব রূপ দেখিনি হরি
	আপন মন দিয়ে তোমারে গড়ি,
কাঁদ না হাস তুমি সে-রূপ হেরি — বুঝিতে পারি না আমি তাই কাঁদে প্রাণ॥
	কোটি রবি-শশী আরতি করে যারে,
	প্রদীপ জ্বালিয়া খুঁজি আমি তারে।
বন-ডালা যাঁর পূজার সম্ভার, যোগী মুনি করে যুগযুগ ধ্যান।
কোথা শ্রীমুখ তব কোথা শ্রীচরণ, চন্দন দিব কোন্‌খান ॥

বাণী

কোন্ অজানা জনে দিব প্রাণ মোর।
নেবে আমার মালা সে-কোন কিশোর।।
কাহার লাগি’ একেলা জাগি
কোথা সে আমার প্রেম-অনুরাগী,
কোন্ কাননে রয় সে বনমালী চোর।।
পরি’ বধূর সাজ ভুলিয়া কুল লাজ
বৃথা আছি ব’সে কোথা হৃদয়-রাজ,
মম যৌবন-নিশি জেগে হল ভোর।।

বাণী

কেন হেরিলাম নব ঘনশ্যাম কালারে কাল্‌ কালিন্দী-কূলে।
(সে যে) বাঁশরির তানে সকরুণ গানে ডাকিল প্রেম-কদম্ব মূলে।।
কেন কলস ভরিতে গেনু যমুনা-তীরে,
মোর কলস সাথে গেল ভাসি, লাজ-কূল-মান আকুল নীরে।
কলসির জল মোর নয়নে ভরিয়া সই আসিনু ফিরে।।
সখি হে তোদের সে রাই নাই, গোকুলের রাই গোকুলে নাই।
সে যে হারাইয়া গেছে শ্যামের রূপে লো নবীন নীরদে বিজলি প্রায়।
সে রবি-শশী সম ডুবিয়া গেছে লো সুনীল রূপের গগন-গায়।।
হরি-চন্দন-পঙ্কে লো সখি শীতল ক’রে দে জ্বালা,
দুলায়ে দে গলে বল্লভ-রূপী শ্যাম পল্লব মালা।
নীল কমল আর অপরাজিতার, শেজ্‌ পেতে দে লো কোমর বিথার
পেতে দে শয্যা পেতে দে, নীল শয্যা পেতে দে পেতে দে!
পরাইয়া দে লো সখি অঙ্গে নীলাম্বরী, জড়াইয়া কালো বরণ আমি যেন মরি।।

বাণী

কে হেলে দুলে চলে এলোচুলে
হেসে নদীকুলে এলো হেলে দুলে!
	নূপুর রিনিকি ঝিনি বাজে রে
	পথ-মাঝে রে, বাজে রে।।
দূরে মন উদাসি বাজে বাঁশের বাঁশি,
	বকুল-শাখে পাপিয়া ডাকে —
হেরিয়া বুঝি এই বন-বালিকায়
	রঙিন সাজে রে, বাজে রে।।
	এ বুঝি নদীর কেউ
তাই অধীর হলো জলে ঢেউ।
	চন্দন-মাখা যেন চাঁদের পুতলি,
	যত চলে তত রূপ ওঠে উথলি
মেঘে লুকালো পরী লাজে রে, বাজে রে
	পথ-মাঝে রে, বাজে রে।।

বাণী

কল-কল্লোলে ত্রিংশ কোটি-কণ্ঠে উঠেছে গান
জয় আর্যাবর্ত, জয় ভারত, জয় হিন্দুস্থান।।
শিরে হিমালয় প্রহরী, পদ বন্দে সাগর যাঁর,
শ্যাম বনানী কুন্তলা রানী জন্মভূমি আমার।
	ধূসর কভু উষর মরুতে,
	কখনো কোমল লতায় তরুতে,
কখনো ঈশানে জলদ-মন্দ্রে বাজে-মেঘ বিষাণ।।
সকল জাতি সকল ধর্ম পেয়েছে হেথায় টাই
এসেছিল যারা শত্রুর রূপে, আজ সে স্বজন ভাই।।
	বিজয়ীর বেশে আসিল যাহারা,
	আজি মা’র কোলে সন্তান তারা,
(তাই) মা’র কোল নিয়ে করে কাড়াকাড়ি হিন্দু মুসলমান।।
জৈন পার্শী বৌদ্ধ শক্তি খ্রিস্টান বৈষ্ণব
মা’র মমতায় ভুলিয়া বিরোধ এক হয়ে গেছে সব।
	ভুলি’ বিভিন্ন ভাষা আর বেশ
	গাহিছে সকলে আমার স্বদেশ
শত দল মিলে’ শতদল হ’য়ে করিছে অর্ঘ্য দান।।