জয়জয়ন্তী

  • আঁধার রাতের তিমির দুলে আমার মনে

    বাণী

    আঁধার রাতের তিমির দুলে আমার মনে।
    দুলে গো আমার ঘুমে -  জাগরণে॥
    হতাশ-ভরা বাতাস বহে,
    আমার কানে কি কথা কহে;
    দিনগুলি মোর যায় যে ঝ’রে যায় —
    ওগো যায় যে ঝ’রে ঝরা পাতার সনে॥
    গিয়াছে চলিয়া সুখে যাহারা ছিল গো সাথি,
    গিয়াছে নিভিয়া জ্বলিতেছিল যে শিয়রে বাতি।
    স্মৃতির মালার ফুল শুকাইয়া,
    একে একে হায় পড়িছে ঝরিয়া;
    বিদায়-বেলা শুনিয়ে বাঁশি ক্ষণে ক্ষণে॥
    
  • আমার শ্যামা মায়ের কোলে চড়ে

    বাণী

    আমার	শ্যামা মায়ের কোলে চ’ড়ে জপি আমি শ্যামের নাম
    		মা হলেন মোর মন্ত্র-গুরু ঠাকুর হলেন রাধা-শ্যাম।।
    			ডুবে শ্যামা-যমুনাতে
    		মা 	খেলবো খেলা শ্যামের সাথে
    		শ্যাম যবে মোরে হানবে হেলা মা পুরাবেন মনস্কাম।।
    		আমার মনের দোতারাতে শ্যাম ও শ্যামা দুটি তার,
    		সেই দোতারায় ঝঙ্কার দেয় ওঙ্কার রব অনিবার।
    			মহামায়া মায়ার ডোরে
    			আনবে বেঁধে শ্যাম-কিশোরে
    আমি		কৈলাসে তাই মাকে ডাকি দেখবো সেথা ব্রজধাম।।
    
  • কাঁদিতে এসেছি আপনার ল’য়ে

    বাণী

    কাঁদিতে এসেছি আপনার ল’য়ে কাঁদাতে আসিনি হে প্রিয়, তোমারে।
    এ মম আঁখি-জল আমরি নয়নের, ঝরিবে না এ জল তোমার দুয়ারে।।
    	ভালো যদি বাসি একাকী বাসিব
    	বিরহ-পাথারে একাকী ভাসিব,
    কভু যদি ভুলে আসি তব কূলে, চমকি’ চলিয়া যাব দূর পারে।।
    	কাঁটার বনে মোর ক্ষণেকের তরে
    	ফুটেছে রাঙা ফুল শুধু লীলা-ভরে,
    	মালা হয়ে কবে দুলিবে গলে কা’র।
    	জাগিব একাকী ল’য়ে স্মৃতি কাঁটার
    	কেহ জানিবে না, শুকাল কে কোথা
    	কা’র ফুলে কা’রে সাজালে দেবতা,
    নিশীথ-অশ্রু মোর ঝরিবে বিরলে তব সুখ-দিনে হসির মাঝারে।।
    

    ১. মম আঁখি-বারি, ২. থাকুক আমারি, ৩. গলে

  • কোথায় গেলি মাগো আমার

    বাণী

    কোথায় গেলি মাগো আমার খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রেখে
    ক্লান্ত আমি খেলে খেলে এ সংসারে ও-মা ধুলা মেখে।।
    	বলেছিলি সন্ধ্যা হ'লে
    	ধুলা মুছে নিবি কোলে
    ও-মা  ছেলেরে তুই গেলি ছ'লে পাইনে সাড়া ডেকে' ডেকে'।।
    এ কি খেলার পুতুল মা গো দিয়েছিলি মন ভুলাতে
    আধেক তাহার হারিয়ে গেছে আধেক ভেঙে আছে হাতে।
    	এ পুতুলও লাগছে মা ভার
    	তোর পুতুল তুই নে গো এবার
    এখন সন্ধ্যা হলো ও-মা সন্ধ্যা হলো নামলো আঁধার
    	ঘুম পাড়া মা আঁচল ঢেকে।।
    
  • ঘন-ঘোর-মেঘ-ঘেরা দুর্দিনে ঘনশ্যাম

    বাণী

    ঘন-ঘোর-মেঘ-ঘেরা দুর্দিনে ঘনশ্যাম ভূ-ভারত চাহিছে তোমায়।
    ধরিতে ধরার ভার নাশিতে এ হাহাকার আরবার এসো এ ধরায়।।
    		নিখিল মানবজাতি কলহ ও দ্বন্দ্বে
    		পীড়িত শ্রান্ত আজি কাঁদে নিরানন্দে,
    শঙ্খপদ্ম হাতে এ ঘোর তিমির-রাতে তিমির-বিদারী এসো অরুণ-প্রভায়।।
    বিদূরিত কর এই নিরাশা ও ভয়, মানুষে মানুষে হোক প্রেম অক্ষয়।
    কলিতে দলিতে এসো এই দুখ-পাপ-তাপ আন বর সুন্দর, শেষ হোক অভিশাপ,
    গদা ও চক্র করে অরিন্দম এসো, হত-মার দুর্বল মাগিছে সহায়।।
    
  • তোর বিদায়-বেলার বন্ধুরে

    বাণী

    তোর বিদায়-বেলার বন্ধুরে দেখে নে নয়ন পুরে’।
    সে যায় মিশে’ ঐ কোন্ দূরে দিন শেষের’ — শেষ সুরে।।
    	ঘুমের মাঝে বন্ধু তোর
    	ছিঁড়বে বাহুর বাঁধন-ডোর,
    যাবে নয়ন, রবে নয়ন-লো — যায় রে বিহগ যায় উড়ে।।
    	(তুই) বহাবি নদী কেঁদে
    	পাষাণে হৃদয় বেঁধে,
    তবু যেতে হবে তায় অসহায় অচিন্ পুরে।।
    

    নাটক : ‘সাবিত্রী’

  • দারুণ পিপাসায় মায়া-মরীচিকায়

    বাণী

    	দারুণ পিপাসায়
    	মায়া-মরীচিকায়
    চাহিতে এলি জল বনের হরিণী।
    	দগ্ধ মরুতল
    	কে তোরে দেবে জল
    ঝরিবে আঁখি-নীর তোরই নিশিদিনই।।
    নিবায়ে গৃহ-দীপ আপন-নিশাসে
    আলেয়ার পিছে এলি সুখ-আশে,
    	সে-সুখ অবসান
    	সুমুখেতে শ্মশান —
    পিছনে অন্ধকার চির-নিশীথিনী।।
    কেন তুই বনফুল বিলাস-কাননে
    করিয়া পথ ভুল এলি অকারণে।
    	ছিঁড়ে সাঁঝে তোরে
    	মালা গাঁথি’ ভোরে
    দ’লিল বিলাসী পথ-ধূলি সনে।
    সন্ধ্যা-গোধূলির রাঙা রূপে ভুলে’
    আসিলি এ কোথায় তমসার কূলে।
    	শ্রাবণ-মেঘ হায়
    	ভাবিয়া কুয়াশায়
    হারালি পথ তোর রে হতভাগিনী।।
    
  • দেশপ্রিয় নাই শুনি ক্রন্দন সহসা

    বাণী

    ‘দেশপ্রিয় নাই’ শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে জাগি’।
    আকাশে ললাট হানিয়া কাঁদিছে ভারত চির-অভাগী।।
    বহুদিন পরে আপনার ঘরে মা’র কোলে মাথা রাখি’,
    ঘুমাতে এসেছে শ্রান্ত সেননী, জাগায়ো না তারে ডাকি’।
    দেশের লাগিয়া দিয়াছে সকলি, দেয়নি নিজেরে ফাঁকি —
    তাহারি শুভ্র শান্ত হাসিটি অধরে রয়েছে লাগি’।।
    স্বার্থ অর্থ বিলাস বিভব গৌরব সম্মান
    মায়ের চরণে দিয়াছে সে-বীর অকাতরে বলিদান,
    রাজ-ভিখারির ছিল সম্বল শুধু দেহ আর প্রাণ
    তাই দিয়ে দিল শেষ অঞ্জলি দানবীর বৈরাগী।।
    

    প্রথম খন্ড

  • দেশপ্রিয় নাই শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে

    বাণী

    ‘দেশপ্রিয় নাই’ শুনি ক্রন্দন সহসা প্রভাতে জাগি’।
    আকাশে ললাট হানিয়া কাঁদিছে ভারত চির-অভাগী।।
    দেশবন্ধুর পার্শ্বে জ্বলিছে দেশপ্রিয়ের চিতা
    এতদিন পরে বক্ষে এসেছে দুঃখের সাথি মিতা,
    বহিছে অশ্রুগঙ্গা, জ্বলিছে শোকের দীপাম্বিতা —
    নিভে যাবে চিতা, রয়ে যাবে ধুম, চিরদিন বুকে জাগি’।।
    তুমি এসেছিলে হিন্দু-মুসলমানের মিলন-হেতু
    পদ্মা ও ভাগীরথীর মাঝারে তুমি বেঁধেছিলে সেতু,
    অন্ধকারের বুকে ছিলে তুমি দীপ্ত চন্দ্র-কেতু —
    বন্ধন হল নন্দন-ফুল-হার তোমার ছোয়া লাগি’।।
    

    দ্বিতীয় খন্ড

  • বুনো ফুলের করুণ সুবাস

    বাণী

    বুনো ফুলের করুণ সুবাস ঝুরে।
    নাম-না-জানা গানের পাখি, তোমার গানের সুরে।।
    	জানাতে হায় এলে কোথা
    	বনের ছায়ার মনের ব্যথা,
    তরুর ছায়া ফেলে এলে মরুর বুকে উড়ে।।
    এলে চাঁদের তৃষ্ণা নিয়ে কৃষ্ণা তিথির রাতে,
    পাতার বাসা ফেলে এলে সজল নয়ন-পাতে।
    	ওরে পাখি, তোর সাথে হায়
    	উড়তে নারি দূর অলকায়,
    বন্ধনে যে বাঁধা আমি মলিন মাটির পুরে।।
    
  • মেঘ মেদুর বয়ষায় কোথা তুমি

    বাণী

    মেঘ মেদুর বয়ষায় কোথা তুমি
    ফুল ছাড়ায়ে কাঁদে বনভূমি।।
    ঝুরে বারিধারা
    ফিরে এসো পথহারা
    কাঁদে নদী তট চুমি’।।
    
  • মেঘে মেঘে অন্ধ অসীম আকাশ

    বাণী

    মেঘে মেঘে অন্ধ অসীম আকাশ।
    আমারি মত কাঁদে দিশাহারা
    নয়ন পুতলি চাঁদে হারায়ে
    হারায়ে তারি নয়ন তারা।।
    আমার ভুবন আঁধারে ভরিয়া
    নয়ন মণি মোর কে নিল হরিয়া
    প্রিয় নাম ধরে তারে খুঁজি দিকে দিকে
    শূন্য গগনে শুধু ঝরে বারি ধারা।।
    হে আলোর রাজা বল বল মোরে
    মোর আঁখি পুতলি কেন নিলে হ’রে
    তব উৎসব সভা হ’তো না কি উজল
    আমার আঁখির আলো ছাড়া।।
    

  • সজল হাওয়া কেঁদে বেড়ায়

    বাণী

    সজল হাওয়া কেঁদে বেড়ায় কাজল আকাশ ঘিরে,
    			তুমি এসো ফিরে।
    উঠ্‌ছে কাঁদন ভাঙন-ধরা নদীর তীরে তীরে,
    			তুমি এসো ফিরে।।
    	বন্ধু তব বিরহেরি
    	অশ্রু ঝরে গগন ঘেরি’
    লুটিয়ে কাঁদে বনভূমি অশান্ত সমীরে।।
    আকাশ কাঁদে, আমি কাঁদি বাতাস কেঁদে সারা,
    তুমি কোথায়, কোথায় তুমি পথিক পথহারা।
    	দুয়ার খুলে নিরুদ্দেশে
    	চেয়ে আছি অনিমেষে,
    আঁচল ঢেকে রাখবো কত আশার প্রদীপটিরে।