পদ্মার ঢেউ রে — মোর শূণ্য হৃদয়–পদ্ম নিয়ে যা, যা রে। এই পদ্মে ছিল রে যার রাঙ্গা পা আমি হারায়েছি তারে।। মোর পরান–বঁধু নাই, পদ্মে তাই মধু নাই (নাই রে) বাতাস কাঁদে বাইরে, সে সুগন্ধ নাই রে মোর রূপের সরসীতে আনন্দ–মৌমাছি নাহি ঝঙ্কারে রে।। ও পদ্মারে — ঢেউয়ে তোর ঢেউ ওঠায় যেমন চাঁদের আলো মোর বঁধুয়ার রূপ তেমনি ঝিল্মিল করে কৃষ্ণ–কালো। সে প্রেমের ঘাটে ঘাটে বাঁশি বাজায় যদি দেখিস্ তারে, দিস্ এই পদ্ম তার পায় বলিস্, কেন বুকে আশার দেয়ালি জ্বালিয়ে ফেলে গেল চির–অন্ধকারে।
ফিরিয়া এসো এসো হে ফিরে বঁধু এ ঘোর বাদলে নারি থাকিতে একা। হায় গগনে মনে আজি মেঘের ভিড় যায় নয়ন-জলে মুছে কাজল-লেখা।। ললাটে কর হানি’ কাঁদিছে আকাশ শ্বসিছে শন-শন হুতাস বাতাস। তোমারি মত ঝড় হানিছে দ্বারে কর, খোঁজে বিজলি তোমারি পথ-রেখা।। মেঘেরে সুধাই তুমি কোথায় কাঁদন আমার বাতাসে ডুবে যায়! ঝড়ের নূপুর পরি’ রাঙা পায় শ্যামল-সুন্দর দাও দেখা।।
এ কোন্ মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি, নেশায় হলাম দিওয়ানা যে রঙিন হল আঁখি।। তৌহিদের শিরাজি নিয়ে ডাকলে সবায় যারে পিয়ে, নিখিল জগৎ ছুটে এলো রইল না কেউ বাকি।। বসলো তোমার মহ্ফিল দূর মক্কা মদিনাতে, আল্-কোরানের গাইলে গজল শবে কদর রাতে। নরনারী বাদশা ফকির তোমার রূপে হয়ে অধীর যা ছিল নজ্রানা দিল রাঙা পায়ে রাখি’।
তোর কালো রূপ লুকাতে মা বৃথাই আয়োজন। ঢাকতে নারে ও রূপ, কোটি চন্দ্র তপন।। মাখিয়ে আলো আমার চোখে লুকিয়ে রাখিস তোর কালোকে, তোর অতল কালো রূপে মাগো বিশ্ব নিমগন।। আঁধার নিশীথ সে যেন তোর কালো রূপের ধ্যান তোর গহন কালোয় গাহন ক’রে জুড়ায় ধরার প্রাণ। হেরি তোর কালো রূপ স্নিগ্ধ-করা শ্যামা হ’ল বসুন্ধরা, নিবল কোটি সূর্য, তোরে খুঁজে অনুক্ষণ।।
নবীর মাঝে রবির সম আমার মোহাম্মদ রসুল। খোদার হবিব দীনের নকিব বিশ্বে নাই যার সমতুল।। পাক আরশের পাশে খোদার গৌরবময় আসন যাঁহার, খোশ-নসীব উম্মত আমি তাঁর (আমি) পেয়েছি অকূলে কূল।। আনিলেন যিনি খোদার সালাম; তাঁর কদমে হাজার সালাম; ফকির দরবেশ জপি' সেই নাম (সবে) ঘর ছেড়ে হলো বাউল।। জানি, উম্মত আমি গুনাহগার হবো তবু পুলসরাত পার; আমার নবী হযরত আমার করো মোনাজাত কবুল।।
ওরে ডেকে দে, দে লো মহুয়া বনে ফুল ফোটাতো বাজিয়ে বাঁশি কে। বনের হরিণ নাচাতো, পাখিকে গান গাওয়াতো ঢেউ ওঠাতো ঝর্ণা জলে পাহাড়তলিতে।। তার গানের কথা জানিয়ে দিত ফুলের মধুকে তার সুরের নেশা করতো ব্যাকুল মনের বঁধুকে, বুকের মাঝে বাজতো নূপুর চপল হাসিতে।। আঁধার রাতে ফোটাত সে হলুদ গাঁদার ফুল, সে বন কাঁদাতো মন কাঁদাতো, কাজ করাতো ভুল। আর সে বাঁশি শুনি না, ধোঁয়ার ছলে কাঁদি না, রাঙা শাড়ি পরি না, নোটন খোঁপা বাঁধি না — আমি রইতে নারি না হেরে সেই বন উদাসী কে গো।।
